অনলাইন ডেস্কঃ সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন খ্রীষ্টিয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বিষয়ক এপিসকপাল কমিশন।
বাণীতে কমিশনের সভাপতি আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার (সিএসসি) এবং সাধারণ সম্পাদক ফাদার প্যাট্রিক গমেজ জানিয়েছেন, হাজার হাজার বছর ধরে আপনারা আপনাদের বিশ্বাসের ধারায় শ্যামাপূজা বা কালিপূজা পালন করে আসছেন। অন্ধকারসম অশূর নির্মূল করে ঐশ জ্যোতির প্রভায় জীবন গঠন এই মূল বাণী নিয়ে এই পূজা করছেন। আর তাই এই উৎসবের নাম ধারণ করা হয়েছে দীপাবলি। এই বছর দীপাবলি উৎসব পালিত হচ্ছে ১২ই নভেম্বর, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুসারে এই পর্বে প্রতিটি গৃহে প্রজ্জ্বলিত হয় মাটির প্রদীপ; আলোকে আলোকিত হয় গৃহের প্রতিটি অঙ্গন; নারী-পুরুষ সবাই প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ হাতে নিয়ে শক্তির দেবী শ্যামার নিকট প্রার্থনা জানায় মন্দের সেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে, মন্দকে দমন করে আলোকিত মানুষ হয়ে উঠার জন্য। হিন্দু ও খ্রীষ্টান এই আলোর উৎসবে শুধু ঔপাসনিক দিক দিয়ে নয়, পবিত্র শাস্ত্র ভিত্তিকও একত্রে সাম্যের দৃষ্টান্ত হতে পারে। প্রথমে বলতে পারি যীশু নিজেই বলেছেন, ‘আমি
জগতের জ্যোতি, যে আমার পশ্চাতে আসে, সে কোনমতে আঁধারে চলবেনা, কিন্তু
জীবনের দীপ্তি পাবে।’ পবিত্র বাইবেলের সৃষ্টির কাহিনীতেও পাই, ঈশ্বর বললেন, ‘আলো হউক।’ আর আলোতে ভরে গেল গোটা পৃথিবী। ঔপাসনিক আমেজে বলতে পারি যে, ইস্টার সানডে’র পূর্বদিন নিস্তার জাগরণী পুণ্য শনিবারে যীশুই যে পুণ্য জ্যোতি, তার প্রতীক হিসাবে বৃহৎ মোমবাতি জ্বালানো হয়। চিরকুমার ধর্মধাজক খ্রীষ্টজ্যোতি সেই বড় মোমবাতি উচু করে তুলে ধরেন এবং তার সাথে সবাই জ্বলন্ত প্রদীপ হাতে নিয়ে মহান আলো যীশুর সাথে উপাসনালয়ে শোভাযাত্রা করে প্রবেশ করে এই গান গেয়ে: ‘প্রদীপ হাতে নিয়ে চলো, প্রভুর মহিমাগান বল; হাতে হাতে মিলিয়ে, হিংসা-দ্বেষ ভুলে নতুন পৃথিবী গড়ে তুলো।’
বর্তমান পৃথিবী একদিকে যেমন প্রগতির আলো ঝলমল করছে বিভিন্ন পরিসরে, আবার অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠছে পৃথিবীর বহু স্থানেই; আর বোধ করি, বাংলাদেশও এর অন্তর্ভূক্ত। যুদ্ধ, হানাহানী, হিংসা-বিদ্বেষ, মানব-নিধন, আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানী, অশুভ কূটনীতি-রাজনীতি এগুলো যেন বর্তমানের অন্ধকারাচ্ছন্ন অশূর, যে-অশূর সাধারণ মানুষের জীবনকে করছে দুর্বিসহ। অন্তত এই দিপাবলী পর্বে আমরা শুধু হিন্দু-খ্রীষ্টানই নয় সকল ধর্মাবলম্বী আমরা সবাই এই বর্তমান সময়ে প্রার্থনা করতে পারি সেই দিব্য জ্যোতি ভগবান ঈশ্বরের কাছে, ভগবান যীশুর কাছে এবং আপনারা শ্যামা দেবীর কাছে যেন ঐশ শক্তির ক্ষমতাগুণে মানুষ অন্ধকারের সকল অপকর্মপরিত্যাগ করে আলোকিত মানুষ হয়ে তার জীবনচরিত হয়ে উঠে একটি জলন্ত প্রদীপ। আর এই প্রসঙ্গে ধ্যানী রবীন্দ্রনাথের প্রার্থনার সাথে একাত্ম হয়ে
আমাদের হৃদয়-প্রদীপ জ্বালিয়ে আমাদের সবার প্রার্থনা হোকঃ ‘আগুনের পরশমনি ছোয়াও প্রাণে, এজীবন পুণ্য করো, পুণ্য করো দহনদানে।’
শুভ দীপাবলি উৎসব আপনাদের ও আমাদের প্রত্যেকের জীবনকে আলোকিত করুক। এই উৎসব উপলক্ষ্যে খ্রীষ্টিয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় এপিসকপাল কমিশন এবং বাংলাদেশের সকল আর্চবিশপ ও বিশপগন দীপাবলি উপলক্ষ্যে উৎসবের আলোকময় শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ঈশ্বর ভগবান আপনাদের সবাইকে আশীর্বাদ করুন।
Leave a Reply